চাঁই আন্দোলন : পশ্চিমবঙ্গে চাঁইদের আন্দোলন দীর্ঘদিনের। তাঁরা দীর্ঘদিন থেকেই সরকারের কাছে অনগ্রসর সম্প্রদায় হিসেবে নিজেদের দাবী করছিল। তাঁদের অভিযোগ ছিল যে, তারা নাকি সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। পশ্চিমবঙ্গে ১৮৭২ সালের জনগণনার রিপোর্টে 'চাঁই' সমাজকে অনগ্রসর সম্প্রদায় হিসাবে ধরা হয়েছিল। 'চাঁই' সম্প্রদায়কে তপশিলী করার দাবী দীর্ঘদিনের। তবে খাতায় কলমে সুপারিশ করে কালচার রিসার্চ ইন্সটিটিউট ১৯৭২ সালে। চাঁই আন্দোলনের ফলে ২০০২ সালে পশ্চিমবঙ্গের চারটি জেলায় চাঁই সম্প্রদায় তফশিলী SC তে রুপান্তরিত হয়। এবং পরে ২০১৬ সালে চাঁই সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে তফশিলী জাতিতে রুপান্তরিত হয়।
চাঁই সমাজের বিচার ব্যবস্থা : শুরু থেকেই চাঁই সমাজ ঐক্যবদ্ধ ও শৃঙ্খলাপরায়ন ছিল। চাঁইদের মোড়লি প্রথা ছিল খুব। প্রতিটি চাঁই মহল্লাতে দু-একজন করে চাঁইসমাজেরই মোড়ল ছিল। চাঁই মহল্লার (গ্রাম) ছোটখাটো ঝামেলা তারা নিজেরাই মিটিয়ে নিত। চাঁইদের বিচার ব্যবস্থা ছিল খুবই নিষ্ঠাবান প্রকৃতির। চাঁই মোড়লগণ শক্ত হাতে বিচার ব্যবস্থা পরিচালনা করে থাকেন। চৌরাশিয়া,
চাঁই শ্রেণী বিভাগ : একসময় চাঁইদের মধ্যে দুটি শ্রেনীবিভাগ বিদ্যমান ছিল। (শুধু চাঁইদের মধ্যে নয়, মধ্য যুগে হিন্দু সমাজের বিভিন্ন স্তরে বর্ন বৈষম্য, জাতিভেদ, উঁচ নীচ ভেদাভেদ চরম আকারে ছিল। এমনকি মুসলিম সমাজেও ভেদাভেদ ছিল)একটিকে বলা হত বড়চ্যাঁইয়া (বড় চাঁই), আর অন্যটি হল ছোরচ্যাঁইয়া (ছোট চাঁই)। আজ থেকে প্রায় বিশ পঁচিশ বছর আগেও চাঁইদের মধ্যে এই দুটো ভাগ বিদ্যমান ছিল, যা এখন আর নেই। ওদের মধ্যে এতটাই জাত বৈষম্য ছিল যে, তারা একে অপরের জলও স্পর্শ করতেন না। বিবাহ বৈষম্য ছিল, আদান প্রদান নিষিদ্ধ ছিল। চাঁইদের মধ্যে এই বিভাজনের সত্যতা যাঁচাই করতে হলে, বর্তমান ঝাড়খন্ডের পাকুড় জেলার অন্তর্গত গোপীনাথপুর গ্রামে বা মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কার নিমশহরের প্রতন্ত গ্রামের পুরোনো চাঁই মানুষদের সঙ্গে কথা বললেই তা একেবারে পরিস্কার হয়ে যায়।
চাঁই সংগঠন : চাঁই সমাজ বা সম্প্রদায়ের উন্নতির লক্ষে বিভিন্ন চাঁই সংগঠন উল্লেখযোগ্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। চাঁই সমাজ উন্নয়ন সমিতি, মুর্শিদাবাদ জেলা চাঁই সমাজ উন্নয়ন সমিতি, মুর্শিদাবাদ জেলা চন্দ্র ক্ষত্রীয় সমাজ উন্নয়ন সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ চাঁই সমাজ উন্নয়ন সমিতি। বঙ্গীয় বড় চাঁই সমাজ কল্যান সমিতি (মুর্শিদাবাদ)। পশ্চিমবঙ্গ বড় চাঁই কল্যাণ সমিতি (মালদা)। গৌড় চাঁই সমাজ কল্যাণ সমিতি, অখিল ভারতীয় চাঁইসমাজ কল্যাণ পরিষদ।
চাঁই আন্দোলনের নেতা : চাঁই আন্দলনের উল্লেখযোগ্য নেতা হলেন----হরিপদ সরকার, বিজুপদ মন্ডল, বিষ্ণুপদ মন্ডল, কালাচাঁদ মন্ডল, সুনীল চন্দ্র মন্ডল, ড. বিজয় কুমার সরকার, বিষ্ণু মন্ডল, বিজয় মন্ডল, তুলসী চরন মন্ডল, ভরত চন্দ্র মন্ডল, কাঞ্চন কুমার সরকার, রামপ্রবেশ মন্ডল, তারাপদ সরকার, বিনয় কুমার সরকার, সুশান্ত মন্ডল।
চাঁই ভাষা : সুপ্রাচীন চাঁই ভাষা আজ বিলুপ্তপ্রায় হয়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদ ও ঝাড়খন্ডের বেশকিছু যায়গায় এখনও চাঁই সম্প্রদায়ের মানুষরা তাদের মাতৃভাষা চাঁই ভাষায় কথা বলে থাকেন। স্থান ভেদে চাঁইভাষার মধ্যে সামান্য পরিবর্তনও লক্ষ করা যায়। তাছাড়া তাদের মধ্যে ভেদাভেদের জন্যও চাঁই ভাষার হেরফের লক্ষ করা যায়। সবমিলিয়ে বর্তমান সময়ে চাঁই ভাষা আজ বিলুপ্তপ্রায় বিপন্ন ভাষায় পরিনত হয়েছে। চাঁই ভাষা রক্ষার্থে অখিল ভারতীয় চাঁইসমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ড. বিজয় কুমার সরকার (বিজু চাঁই) পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে চাঁই ভাষা একাদেমীর দাবী করছেন।
চাঁই কবি : চাঁই কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চাঁই কবিদের নাম নিম্নে বর্ণিত করা হল------
***** নামকে তালিকা ------
১. পরিমল মণ্ডল (মালদা)
২. প্রকাশ মণ্ডল (মালদা )
৩. গৌরাঙ্গ মণ্ডল ( মালদা )
৪. মিঠুন মণ্ডল (মালদা )
৫. সঞ্জয় কুমার সরকার ( মালদা)
৬. কল্পনা মণ্ডল ( মালদা )
৭. জবা সরকার ( মালদা )
৮. অধ্যাপক বিপ্লব কুমার মণ্ডল ( মালদা )
৯. প্রশান্ত মণ্ডল ( মালদা)
১০. চন্দন মণ্ডল ( মালদা )
১১. ড: বিজয় কুমার সরকার ( নর্থ বেঙ্গল )
১২. গোপাল চন্দ্র মণ্ডল (ঝাড়খণ্ড)
১৩. মোহন মণ্ডল (মুর্শিদাবাদ)
১৪. তরুন কুমার মণ্ডল ( মুর্শিদাবাদ )
১৫ . অধ্যাপক সৃজয় মণ্ডল ( মুর্শিদাবাদ )
১৬. নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল ( মুর্শিদাবাদ )
১৭. সন্তোষ কুমার মণ্ডল ( মুর্শিদাবাদ)
১৮. তুলসীচরণ মণ্ডল ( মুর্শিদাবাদ )
১৯. সাথী মণ্ডল ( মুর্শিদাবাদ)
২০.গোপাল মণ্ডল , (মুর্শিদাবাদ)
২১. বরুন মন্ডল ( মালদা )