Wednesday, January 15, 2020

ছোট চাঁই ও বড় চাঁই (বড়চ্যাঁইয়া ও ছোরচ্যাঁইয়া)

বড়চ্যাঁইয়া ও ছোরচ্যাঁইয়া:

একসময় চাঁই‌দের ম‌ধ্যে দু‌টোভাগ বিদ্যমান ছিল, যা এখন আর নেই। এক‌টি‌কে বলা হত বড়চ্যাঁইয়া, আর অন্য‌টি হল ছোরচ্যাঁইয়া। বর্তমান ঝাড়খ‌ন্ডের পাকুড় জেলার অন্তর্গত গোপীনাথপুর গ্রা‌মে পু‌রো‌নো চাঁই মানুষ‌দের স‌ঙ্গে কথা বল‌লেই তা একেবা‌রে প‌রিস্কার হ‌য়ে যায়। একসময় চাঁই‌দের ম‌ধ্যে দু‌টো শ্রেনী, বড়চ্যাঁইয়া ও ছোরচ্যাঁইয়া ছিল তা উপল‌ব্ধি কর‌তে হ‌লে ফারাক্কার নিমশহ‌রের পু‌রো‌নো চাঁই‌দের জান‌লেই তা স্পষ্ট হ‌য়ে যায়। একটা সময় হিন্দু‌ সমা‌জের ম‌ধ্যে বি‌ভিন্ন জ‌টিলতা ছিল, ভেদা‌ভেদ ছিল প্রবল। ‌শুধু হিন্দু সমা‌জে নয়, মুস‌লিম সমা‌জেও সেইসময় বিভাজন ছিল। জোলাহা, পেঁ‌চি, খোট্টা মুস‌লিম সমা‌জেও ছিল, আবার জোলাহা, খোট্টা হিন্দু সমা‌জেও ছিল। অতএব সেই সময় যে বিভাজন, ভেদা‌ভেদ ছিল। মালদা ব‌লে নয় ভারতব‌র্ষের বি‌ভিন্ন প্রা‌ন্তে ভেদা‌ভেদ ছিল। তাছাড়া ফারাক্কার নিমশহর মু‌র্শিদাবা‌দে অব‌স্থিত। যাই‌হোক, সেসব কা‌হিনী ইতিহা‌সের চ্যাপ্টা‌রেই থাকুক। এখন আমা‌দের ঐক্যবদ্ধ হ‌তে হ‌বে। এখনও অনেক কাজ বাঁ‌কি। চাঁইভাষা রক্ষা‌র্থে চাঁই আন্দোলন‌কে জোরদার কর‌তে হ‌বে। সরকা‌রের কা‌ছে চাঁইভাষা একা‌দেমীর দাবী জোরদার কর‌তে হ‌বে, চাঁই আন্দোলন আরও জোরদার কর‌তে হ‌বে।

এখন আর এই ছোট চাঁই বা বড় চাঁই বা লাগর চাঁই এইগু‌লি কোনটাই নেই। সবাই চাঁই। একসময় হিন্দু জা‌তির ম‌ধ্যে যত ভেদা‌ভেদ ছিল বর্তমা‌নে তা নেই। এখন সব‌কিছুর সং‌মিশ্রন ঘ‌টে চ‌লে‌ছে। একসময় র‌বিদাস‌দের ম‌ধ্যে দু‌টো শ্রেনী ছিল, এক‌টি হ‌চ্ছে চামার, অপর‌টি হ‌চ্ছে জোলাহা। যা এখন অবলুপ্ত হ‌য়ে‌ছে।

ছোট চাঁই বড় চাঁই মৌ‌খিক ছিল। বেদও এক‌দিন মৌ‌খিক ছিল, প‌রে লি‌পিবদ্ধ করা হয়, অনেকটা সেইরকম। ত‌বে জোলাহা জা‌তিটা মুস‌লিম‌দের ম‌ধ্যেও ছিল।

চাঁই জা‌তির ম‌ধ্যে বিভাজন কোনম‌তেই কাম্য নয়। ছোট চাই বা বড় চাঁই কোনটাই দরকার নেই। দরকার সকল চাঁই জা‌তির ঐক্যের। একসময় মালদার বড় চাঁই সংগঠন (প‌শ্চিমবঙ্গ বড় চাঁই কল্যাণ স‌মি‌তি) বা মু‌র্শিদাবা‌দের বড় চাঁই সংগঠন (ব‌ঙ্গীয় বড় চাঁই সমাজ কল্যান স‌মি‌তি) ছিল। বর্তমা‌নে আমা‌দের বিভাজন নয় ঐক্য চাই এই নী‌তি আমা‌দের সক‌লেরই গ্রহণ করা উচিৎ ব‌লে ম‌নে ক‌রি।

আর হ্যাঁ, চাই‌দের বিভাজন সামা‌জিক না অর্থ‌নৈ‌তিক তা বলা একেবা‌রেই ভুল হ‌বে। চাঁই‌দের বিভাজ‌নের কথা না ব‌লে ঐক্যের কথা ব‌লি। কোন ক্ষে‌ত্রে মতা‌নৈক্য থাক‌তেই পা‌রে তা ব‌লে, আমরা কেউই লক্ষ থে‌কে স‌রে দাঁড়া‌তে পা‌রি না। লক্ষ আমা‌দের স্থির রাখ‌তে হ‌বে।

No comments:

Post a Comment